বিশ্ব সেপসিস দিবস ২০১৯ : সেপসিস : কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
আজ, ১৩ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব সেপসিস দিবস’। গ্লোবাল সেপসিস জোটের উদ্যোগে ২০১২ সাল থেকে এই দিবস পালন করা শুরু হয়েছিল। প্রতিবছর ১৩ সেপ্টেম্বর সেপসিস সম্পর্কে জনগণের কাছে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বজুড়ে সেপসিস দিবস পালন করা হয়। আজকের এই দিনে আসুন আমরা সেপসিস সম্পর্কে জেনে নিই।
সেপসিস খুব মারাত্মক একটি রোগ, যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দেহের রক্তের কার্য ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ ভাবে পরাজিত করে। এই রোগ দেহের যেকোনও জায়গায় হতে পারে। রোগ জীবাণু রক্ত প্রবাহে ঢুকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে৷ সাধারণত শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারে ৷ কিন্তু, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে এই ধকল সামলানো কঠিন৷ বিশেষত, শরীরের রক্তকে প্রভাবিত করে। সাধারনত দেহের যে যে জায়গায় এই সংক্রমণ ঘটতে পারে তা হল – অন্ত্রে, কিডনিতে, ঘিলুর ভাঁজে, যকৃতে, গলব্লাডারে, ফুসফুসে (ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া) ও ত্বকে। এছাড়া, শিশুদের হাড়ে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যুও হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাতে সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় ও থেরাপি জরুরি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংক্রমিত হয়৷ যেমন ফুসফুসের সংক্রমণ৷ অ্যান্টিবায়োটিক নিলে কয়েকদিনের ভালো হয়ে যেতে পারে এই সংক্রমণ৷ কিন্তু, ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের অবস্থা কয়েকঘণ্টার মধ্যে মারাত্মক হয়ে যায় ৷ প্রাথমিক স্থান থেকে জীবাণু অন্য জায়গায় চলে যায়৷ এই রোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুবই কম বয়সী বা প্রবীণদের হয়। অবশ্য, যেকোনও কারোরই হতে পারে। বিশেষ করে, কোনও ক্ষত কিংবা পোড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম,ডায়াবেটিস, এইডস, কিডনি বা লিভারের রোগ ও ক্যান্সার সহ দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা – এদের ক্ষেত্রে এই রোগ ধরা পড়লে ঝুঁকি বেশি হতে পারে। বেশিরভাগই, হাসপাতালে বড় বড় অপারেশনের পর ক্ষত সারতে অনেকদিন লেগে যায়৷ কারণ, এটা জীবাণুদের জন্য এক উর্বর স্থান৷ এ কারণে হাসপাতালের স্বাস্থ্যরক্ষার দিকে নজর রাখাটা অত্যন্ত জরুরি৷
রোগের লক্ষণ
১) এই রোগে রক্ত চাপ কমে যায়। অল্প রক্ত চাপের কারণে মাথাঘোরা ও ঝিমুনি হয়।
২) তলপেটে ব্যথা।
৩) মানসিক অবস্থার পরিবর্তন
৪) দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া
৫) প্রস্রাব কমে যাওয়া,
৬) খুব বেশী ঘাম হওয়া,
৭)মানসিক অবস্থার পরিবর্তন,
৮) দেহের তাপমাত্রা কমে যাওয়া,
৯) প্লেটেলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া,
১০) দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়া,
১১) ঠাণ্ডা লাগা ও কাঁপুনি সহ জ্বর
১২) ত্বকে চাকা-চাকা লালচে দাগ হওয়া ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয়
সেপসিস রোগ নির্ণয় করতে গেলে, ডাক্তার প্রথমেই লক্ষণ ও উপসর্গ দেখেন এবং তারপরে যা সুপারিশ করতেও পারেন তা হল- রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষা, এক্স-রে, এম আর আই, সি টি, আলট্রাসাউন্ড, ক্ষত সিক্রেশান ইত্যাদি।
চিকিৎসা
সেপসিস রোগীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ICU-তে রাখা হয়। সেপসিসের চিকিৎসা করবার জন্য, অনেক রকমের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। এছাড়া, করটিকোস্টেরয়েডস, ইনসুলিন ব্যবহার করা যেতেও পারে। সংক্রমণের উৎস সরানোর জন্য ডাক্তার সার্জারির পরামর্শ দিতেও পারেন। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ ও তরল একটি শিরার মধ্য দিয়ে দেওয়া হয়। অক্সিজেন দেওয়া হয় এবং যে ওষুধ রক্ত চাপ বৃদ্ধি করে, প্রয়োজনে তাও দেওয়া হয়। বিকল কিডনির জন্য ডায়ালাইসিস করা প্রয়োজন। অকৃতকার্য ফুসফুসের জন্য একটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস মেশিন প্রয়োজন।
রোগ প্রতিরোধ
সেপসিস কমানোর জন্য,উন্নত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার, ফ্লু, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রমণের টীকা নেওয়া দরকার, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা করা দরকার।
আলমগীর আলম
ন্যাচারোপ্যাথি ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ
আমি আলমগীর আলম, আকুপ্রেসার ও ন্যাচারোপ্যাথি নিয়ে কাজ করি, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এটা প্রমাণিত যে, আমরা বর্তমান সময়ে যে খাদ্যভাস, জীবনাচার নিয়ে আছি তাতে সুস্থ থাকা অসম্ভব। আমাদের প্রচলিত চিকিৎসা ব্য...
View author profileRelated Posts
সজনে ও সজনে গাছের বহুবিধ উপকারিতা ও গুনাগুণ
Aug 12, 2025
তেজপাতার ভেষজ গুণ
Aug 12, 2025
ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পুদিনা পাতা | আলমগীর আলম
Aug 12, 2025