এই যে মানুষের দুধ খাওয়ার অভ্যাস, স্বাদ ছাড়তে পারে না তার পেছনে আছে দুধ খাওয়ার ভালো কিছু দিক।

বিশেষ করে গরুর দুধে ক্যালসিয়াম থেকে শুরু করে দুধ একটি সম্পূর্ণ খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। দুধ ২২টি মিনারেলসমৃদ্ধ। ফলে পুষ্টির জন্য মানুষ নিরাপদ খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে। দুধে থাকে আয়রন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-সিক্স, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, নিয়াসিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন এ ছাড়া দুধে অন্যান্য প্রকারের তুলনায় বেশি চর্বি রয়েছে। যেমন স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৪.৮ গ্রাম, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ১.৯ গ্রাম ও কোলেস্টেরল ২৪ মিলিগ্রাম।
গরুর দুধ অনেক মানুষের জন্য একটি দৈনিক প্রধান খাদ্য এবং সহস্রাব্দ ধরে চলে আসছে। যদিও এটি এখনো একটি জনপ্রিয় খাবার। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যান্য গবেষণা অবশ্য দুগ্ধজাত খাবারের স্বাস্থ্য উপকারিতা নির্দেশ করে। দুধের নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন।
ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা
অন্যান্য প্রাণীর দুধের তুলনায় গরুর দুধে ল্যাকটোজ বেশি থাকে। ২০১৫ সালের একটি পর্যালোচনা দেখা গেছে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের কোনো না কোনো ধরনের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা রয়েছে। এ অবস্থার বেশির ভাগ মানুষ প্রাণীর দুধ খেতে পারে না, গরুর দুধে থাকা ল্যাকটোজ মানুষের পক্ষে হজম করা কঠিন হতে পারে, ফলে বমি বমি ভাব, বাধা, গ্যাস, ফোলাভাব ও ডায়রিয়া হয়। দুগ্ধজাত খাদ্য হজমের সমস্যা পরবর্তী জীবনে বিকশিত হতে পারে এবং ফলে লক্ষণগুলো ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে পারে। অনেকে আবার দুধ না খেতে পারলেও টকদই, পনির খেতে কোনো সমস্যা হয় না।

হাড়ের ক্ষতি বাড়ে
দুধে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে মানুষ তার শরীরে ক্যালসিয়াম পূরণের জন্য দুধ খেয়ে থাকে; কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে এর বিপরীত! গবেষণা বলছে, গরুর দুধ আসলে আমাদের হাড়ের ক্যালসিয়াম কেড়ে নেয়। প্রাণীর প্রোটিনগুলো ভেঙে গেলে অ্যাসিড তৈরি করে এবং ক্যালসিয়াম হলো একটি চমৎকার অ্যাসিড নিউট্রালাইজার, অ্যাসিডগুলোকে নিরপেক্ষ এবং ফ্লাশ করে ও আমাদের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বের করা হয়। এ কারণেই মেডিকেল স্টাডির পরে মেডিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সবচেয়ে বেশি গরুর দুধ খায় তাদের ফ্র্যাকচার হওয়ার হার তত বেশি। তাই আর্থ্রারাইটিসে যারা ভুগছেন, তাদের গরু দুধের বিকল্প দুধ খেতে বলা হয়।
ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা
দুধ এবং অন্যান্য খাবারের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। দুধ শর্করা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। একটি সুইডিশ গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীরা প্রতিদিন দুগ্ধজাত ‘পণ্য’ গ্রহণ করেন, তাদের ওভারিয়ান ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ।
এ ছাড়া গরুর দুধের জন্য ওজন বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, অ্যানাফিল্যাক্সিস, শ্বাসকষ্ট, রক্তাক্ত মল, বাচ্চাদের অ্যালার্জি বাড়তে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদেরও দুধের অ্যালার্জি হতে পারে। ব্রণও ট্রিগার করতে পারে। ইনসুলিন ও ইনসুলিনের মতো গ্রোথ ফ্যাক্টর-1 (IGF-1)–সহ নির্দিষ্ট হরমোনের ওপর দুধের প্রভাবের কারণে হতে পারে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারসহ কিছু খাবার একজিমাকে আরও খারাপ করতে পারে।
দুধের নানা গবেষণা বলা হচ্ছে, গরুকে বাঁচানোর জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়টিক, অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা ক্ষতি করতে সক্ষম। এ ছাড়া গরুর দুধ বাছুরদের পুষ্টির চাহিদার জন্য উপযুক্ত, যাদের চারটি পাকস্থলী আছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে শতকেজি ওজন বাড়ে, দুই বছর বয়স হওয়ার আগে তাদের ওজন ৫০০ কেজির বেশি হয়। গ্রোথের এই উপাদান মানুষ খায়! তাই সবার জন্য গরুর দুধ উপযোগী না। সেই সঙ্গে আপনি দুধ সহ্য করতে না পারলে এর বিকল্পও বিবেচনায় রাখতে পারেন।
লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ
আলমগীর আলম
ন্যাচারোপ্যাথি ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ
আমি আলমগীর আলম, আকুপ্রেসার ও ন্যাচারোপ্যাথি নিয়ে কাজ করি, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এটা প্রমাণিত যে, আমরা বর্তমান সময়ে যে খাদ্যভাস, জীবনাচার নিয়ে আছি তাতে সুস্থ থাকা অসম্ভব। আমাদের প্রচলিত চিকিৎসা ব্য...
View author profileRelated Posts
মৌসুম পরিবর্তনের সময় ভালো থাকার কৌশল
Aug 12, 2025
কুসুম গরম পানিতে শরীর-মন তাজা
Aug 12, 2025
দারচিনি খাওয়ার নানা উপকারিতা
Aug 12, 2025